‘পিচ্চি দুইটা কই গেল? আশেপাশে ওদের দেখছি না যে?’, অর্পিতার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল কৌশিক।
-‘আছে কোথাও, খেলছে হয়তো। যে চঞ্চল দুজন, একটুও স্থির হয়ে থাকে নাকি!’, উত্তর দিলো অর্পিতা।
অঞ্জন আর অধরা – দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে ছোট্ট সংসার কৌশিক আর অর্পিতার। ওদের স্কুলের কাছাকাছি আসার জন্যেই আগের বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় ওঠা। নতুন বাসায় আসার পর থেকে বাচ্চা দুটো শুধু এদিক সেদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে। পিঠাপিঠি ভাইবোন তাই দুজন সবসময় একসাথেই থাকে, অধরা পড়ে ক্লাস থ্রিতে আর অঞ্জন ক্লাস টুতে। একটু পুরনো আমলের হলেও এই বাসাটা ওদের দুজনের খুব পছন্দ হয়েছে, তার উপর স্কুলটাও এতো কাছে! প্রথম দুই দিন আনন্দে বলতে গেলে ঘুমায়ইনি দুই ভাই বোন!
দুই দিন পর তাদের দৌরাত্ম্য কমলো, চুপচাপ ঘুমাতে গেল দুজনেই। তারপরের দিনেও একই চিত্র, দুজনেই চুপচাপ। একটু চিন্তিত হল কৌশিক আর অর্পিতা, দিনকাল ভালো না, স্কুলে ওরা দুজন একসাথে যায়-আসে, পথে যদি কেউ কিছু করে থাকে বা স্কুলে যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে সেটা তাদের সরাসরি জানতে পারার কথা না। তাই কৌশিক আর অর্পিতা নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঠিক করে নিলো রাতে ডিনারের পর কৌশিক কথা বলবে অঞ্জনের সাথে আর অর্পিতা অধরাকে জিজ্ঞেস করবে কী হয়েছে।
———————————
রাতে খাওয়া শেষেই নিজেদের আলাদা আলাদা রুমে চলে গেল অঞ্জন আর অধরা। কৌশিক কিছুক্ষণ পর অঞ্জনের রুমে গিয়ে খাটের উপর বসলো।
বলল, ‘কী হয়েছে বাবা? চুপচাপ কেন?’।
অঞ্জন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ‘বাবা, আমার ভয় লাগে’।
অবাক হয়ে কৌশিক বলল, ‘কাকে ভয় লাগে বাবা?’
অঞ্জন বলল, ‘খাটের নিচে যে লুকিয়ে আছে তাকে’।
কৌশিক হেসে ফেলল, বলল ‘তোমার খাটের নিচে কেউ লুকিয়ে নেই বাবা, এখনই দেখে দিচ্ছি’।
খাট থেকে নেমে নিচে তাকালো কৌশিক, চমকে উঠে দেখল অঞ্জন লুকিয়ে আছে খাটের নিচে, অবিকল খাটের উপরে যে অঞ্জন বসে আছে সেই অঞ্জন…
কৌশিককে দেখে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল অঞ্জন, ‘বাবা, আমার খাটের উপরে কে যেন বসে আছে’…..
——————————-
পাশের রুমে অধরার চুল আঁচড়ে দিচ্ছিল অর্পিতা, চুল আঁচড়ানো শেষে আয়নাটা অধরার মুখের সামনে ধরে বলল অর্পিতা, ‘দেখি আমার মামণিকে কেমন লাগছে’, আয়নায় তাকিয়েই আঁতকে উঠল অর্পিতা, তার সামনে বসে থাকা অধরাকে আয়নায় দেখা যাচ্ছে না…গলা শুকিয়ে যাচ্ছে অর্পিতার, জ্ঞান হারানোর আগের মুহূর্তে অর্পিতা দেখল রুমের বড় আয়নাটার ভেতর থেকে অধরা তাকে চিৎকার করে ডাকছে, যেন বলছে ‘মা আমাকে বাঁচাও…’, অথচ অধরা তো তার সামনেই বসে আছে, যে অধরার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে না আয়নায়…..
———————————
(বিদেশী গল্পের ছায়া অবলম্বনে)